(কম্পিউটারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশের পরিচিতি

কম্পিউটারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশের পরিচিতি



ইতিপূর্বে আমরা কম্পিউটার সম্পর্কে অনেক কিছুই জেনেছি। এবার আমরা কম্পিউটারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশের সাথে সরাসরি পরিচিত হব।কম্পিউটারের প্রধান প্রধান অংশগুলোর বর্ণনায় প্রথমে আলোচনা করবো কিম্পিউটারের সিপিইউ বা কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াজাতকরণ অংশ, ইরেজিতে সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট নিয়ে।



CPU:



 বাহ্যিক দৃষ্টিতে এটা একটা লম্বাটে বাক্সের মতো দেখতে। এই অংশে কম্পিউটার তার যাবতীয় প্রক্রিয়াজাত করার কাজগুলো করে। এর মধ্যেই থাকে অনেক প্রয়োজনীয় ডিভাইস। যেমন, হার্ডডিস্ক, ফ্লপি ডিস্ক, সিডি বা ডিভিডি ড্রাইভ, মোইন বোর্ড বা মাদারবোর্ড, র‌্যাম, প্রসেসর ইত্যাদি।প্রতিটি সিপিইউ-এ একটি করে মেইন সুইচ থাকে, যেটা দিয়ে সিপিইউ অন-অফ করা যায়। এছাড়াও আরও একটি সুইচ থাকে যেটা দিয়ে সিপিইউকে রিষ্টার্ট করা যায়।(অনেক সময় কাজ করতে করতে কম্পিউটার সিষ্টেমে জ্যাম লেগে যায় তখন এই রিষ্টার্ট সুইচ ব্যবহার করে নতুন করে আবার কম্পিউটার চালু করে জ্যাম মুক্ত করতে হয়।) সিপিইউ যখন চালু থাকে তখন এর সামনের দিকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিভিন্ন রঙের ২/৩টা বাতি জ্বলতে থাকে।কম্পিউটার যখন কাজে ব্যস্ত থাকে তখন এদের মধ্যে থেকে একটি ক্ষুদ্র বাতি মিটি মিটি করে জ্বলতে থাকে।



মাদারবোর্ডঃ

 মাদারবোর্ড হল ব্যাক্তিগত কম্পিউটারের মত জটিল ইলেকট্রনিক সিস্টেম এর মূল সার্কিট বোর্ড(পিসিবি)। মাদরবোর্ডকে কখনও কখনও মেইনবোর্ড বা সিস্টেম বোর্ড -ও বলা হয়। তবে ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারে এটিকে লজিকবোর্ড[১] বলা হয়। motherboard এর মাধ্যমে কম্পিউটারের সকল যন্ত্রাংশকে একে অপরের সাথে সংযুক্ত করা হয়।



সাধারণ ডেস্কটপ কম্পিউটারে মাদারবোর্ডের সাথে মাইক্রোপ্রসেসর,প্রধান মেমরি ও কম্পিউটারের অন্যান্য অপরিহার্য অংশযুক্ত থাকে। অন্যান্য অংশের মধ্যে আছে শব্দ ও ভিডিও নিয়ন্ত্রক, অতিরিক্ত তথ্যভান্ডার, বিভিন্ন প্লাগইন কার্ড যেমন ল্যান কার্ড ইত্যাদি। Keyboard, mouse সহ সব Input/output যন্ত্রাংশও মাদারবোর্ডের সাথে যুক্ত থাকে।



মাদারবোর্ড প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আসুস,গিগাবাইট,ইন্টেল,ইসিএস ইত্যাদি। আসুস বর্তমানে পৃথিবীর সবথেকে বড় মাদারবোর্ড প্রস্তুতকারক কোম্পানি।



প্রসেসরঃ



 প্রসেসর আমাদের ব্রেইনের মত। এটা আলু, কন্ট্রোল ইউনিট আর রেজিস্টার এর সমন্বয় । ঘাবড়ে যাবার কিছু নাই। এই আলু সেই আলু না। Arithmetic Logic Unit। সব কিছু বিস্তারিত আর নাই বললাম একটা উদাহরণ দেই। আপনি রাস্তা পার হচ্ছেন। রাস্তার অপারে দাঁড়িয়ে গাড়ির শা শা আসা যাওয়া দেখছেন। হঠাত দেখলেন অনেক দূরে একটা গাড়ি। ভাবলেন পার হতে পারব। এখন হসাব করছেন। ঐ গাড়ির গতি কত? ঐ গাড়ি থেকে আমার দূরত কত? ঐ গাড়ি আমার কাছে আসতে কতক্ষন লাগবে? রাস্তা পার হতে আমার কতক্ষন লাগবে? আমার কত দ্রুত রাস্তা পার হতে হবে? এই হিসাবে একটু এদিক সেদিক হলে আপনি শেষ। just শেষ! 


কিন্তু আপনার ব্রেইন এত এত ফাস্ট যে আজও, এই লেখা পড়ার আগেও ভাবেন নাই আমাদের ব্রেইন কত ফাস্ট কাজ করে। কত প্রশ্নের সমাধান এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে সমাধান করে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। আলহামদুলিল্লাহ! এই উদাহরণ থেকে প্রসেসর এর এলিমেন্ট গুলো বুঝার ট্রাই করি। কন্ট্রল ইউনিট সিদ্ধান্ত নেয়, এবং আপ্রপ্রিয়েট সিগ্নাল পাঠায়। কি করতে হবে না করতে হবে। আলু (ALU) তে সব হিসাব নিকাশ হয়, আমি রাস্তা পার হব কিনা, পার হলে কত দ্রুত হতে হবে, না কি করতে হবে। আসতে থাকা গাড়ির স্পিড লিমিট ৩০ km/h হলে কত দ্রুত আমি পার হলে রাস্তার অপারে যেতে পারব, আমি গাড়ি আসার আগে পার হব নাকি গাড়িটা পার হওয়ার পর পরি ঐ গাড়ির পিছু হয়ে পার হব, সব হিসাব এই আলুই করে। রেজিস্টারের কাজ প্রসেসরে টেমপরারি মেমরির জোগান দেওয়া। এখন আসেন Core নিয়ে কথা বলি। “কোর – Core” হলো আলাদা Central Processing Unit which Maine CPU এর অংশ হলেও আলাদা ভাবে একই কাজ করে। 


উদাহরণ হিসাবে বলা যায় ডুয়েল কোর চিপ। এটি দেখতে একটি একক সিপিইউ চিপ মনে হলেও এর মাঝে দুটি আলাদা ফিজিক্যাল সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট আছে। এর মানে হলো একের ভেতর দুইটি সিপিইউ। 



এখন প্রশ্ন আসতে পারে এই অতিরিক্ত Central processing unit তাহলে কী উপকারে আসবে? প্রসেসরের একটি কোরের অতিরিক্ত যে কোরগুলো থাকবে সেগুলো মূলত মাল্টি টাস্কিং এ কাজ করে । আপনার যদি একটি সিঙ্গেল কোর পিসি থাকে এবং এটাকে যদি আপনি ডুয়েল কোরে আপগ্রেড করেন তাহলে বুঝতে পারবেন পিসি লক্ষ্যনীয় মাত্রায় দ্রুতগতির হয়ে গেছে। কীভাবে সেটা হচ্ছে চলুন ব্যাখ্যা করা যাক। ধরুন আপনি কম্পিউটারে গান শুনছেন এবং একই সাথে ইন্টারনেট ব্রাউজ করছেন। যদি আপনার পিসিতে একটিমাত্র প্রসেসর কোর থাকে তাহলে ইন্টারনেট ব্রাউজার আনরেসপন্সিভ হয়ে যাবে। কারন মিউজিক প্লে করার জন্য যখন একটি প্রসেসর কোর ব্যবহৃত হবে তখন যদি ব্রাউজার অন থাকে তাহলে প্রসেসর কোর এর কাজ দুটি অংশে ভাগ হয়ে যাবে এবং তুলনামূলক বড় কাজটি যথেষ্ট রেসপন্স করতে পারবে না। এক্ষেত্রে দুই বা ততোধিক কোর থাকলে কাজগুলো যথেষ্ট দ্রুত হবে। একাধিক কোর না থাকলে কম্পিউটার কখনোই স্মুথলি কাজ করতে পারবে না।


 আসা করি কোর জিনিসটা ক্লিয়ার। কোর এর সংখ্যা হিসাবে লিস্টঃ ডুয়েল কোর – দুটি প্রসেসর ইউনিটকোয়াড কোর - চারটি প্রসেসর ইউনিটহেক্সা কোর - ছয়টি প্রসেসর ইউনিটঅক্টা কোর – আটটি প্রসেসর ইউনিটডেকা কোর – দশটি প্রসেসর ইউনিট ইত্যাদি। এখন আসা যাক গিগা হার্জএ। মনে করি, একটি ইন্টেল Core i5-3330 কোয়াড-কোর প্রসেসরের ক্লক স্পিড ৩গিগাহার্জ। এর মানে হলো প্রসেসিং ইউনিটে ৪টি ইন্টেল i5 প্রসেসর আছে যাদের প্রত্যেকটির স্পিড ৩ গিগাহার্জ করে। এখন আসেন বিট নিয়ে কথা বলি। 32-bit আর 64-bit আসলে বুঝায় একটা প্রসেসর এক সাথে কতটুকু তথ্য র্যামে হেন্ডেল করতে পারে।দশমিকের হিসাবে যেমন ৬৪ বড় ঠিক তেমনি ৩২ বিটের চেয়ে ৬৪ বিট এমনিতেই ফাস্ত হবে, তাই বলে কয়েক বিলিওন গুন বেশি! ৬৪ বিট processor চার বিলিওন বারেরও বেশি বার ফিসিকেল memory তে এক্সেস নিতে পারে।



হার্ডডিস্কঃ (Hard disk) 

হার্ড ডিস্ক হলো তথ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত এক প্রকারের চৌম্বকীয় চাকতি-ভিত্তিক যন্ত্রাংশ। হার্ড ডিস্কে সমকেন্দ্রিক একাধিক চাকতি থাকে, এবং তথ্য পড়ার জন্য একাধিক Head (হেড) থাকে। আইবিএম সর্ব প্রথম ১৯৫৭ সালে হার্ড ডিস্ক উদ্ভাবন করে। বর্তমানে অধিকাংশ কম্পিউটারে তথ্য সংরক্ষণের স্থায়ী (non-volatile) ব্যবস্থা হিসাবে হার্ড ডিস্ক ব্যবহৃত হয়। হার্ড ডিস্ক ছাড়াও বর্তমানে ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার, মিউজিক প্লেয়ার প্রভৃতি যন্ত্রে হার্ড ডিস্ক ব্যবহার করা হয়। শুরুর দিকের হার্ড ডিস্ক গুলো ছিলো অপসারনযোগ্য মাধ্যম, কিন্তু বর্তমানের হার্ড ডিস্ক গুলো সাধারণত ধাতব বাক্সে আবদ্ধ থাকে।


র‌্যামঃ (Ram)

র‌্যান্ডম অ্যাক্সেস মেমোরি(ইংরেজি: Random access memory), সংক্ষেপে র‌্যাম (RAM) হল এক ধরনের কম্পিউটারের উপাত্ত (ডাটা) সংরক্ষণের মাধ্যম। র‌্যাম থেকে যে কোন ক্রমে উপাত্ত অ্যাক্সেস করা যায়, এ কারণেই একে র‌্যান্ডম অ্যাক্সেস মেমোরি বলা হয়। র‌্যান্ডম শব্দটি দিয়ে এখানে বুঝানো হয়েছে - যে কোনো উপাত্ত (তার অবস্থানের উপরে নির্ভর না করে) ঠিক একই নির্দিষ্ট সময়ে উদ্ধার করা যায়। রক্ষনাত্নক দৃষ্টিতে, আধুনিক ডির‍্যামগুলো র‍্যান্ডম এ্যাকসেস মেমোরি নয় (যেভাবে এগুলো ডাটা রিড করতে পারে)। একইসাথে, বিভিন্ন ধরনের এসর‍্যাম, রম, ওটিপি এবং নর ফ্ল্যাশ ইত্যাদি র‍্যান্ডম এ্যাকসেস মেমোরি। র‍্যামকে ভোলাটাইল মেমোরি বলা হয় কারন এতে সংরক্ষিত তথ্য বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর আর থাকে না। আরো কিছু নন-ভোলাটাইল মেমোরি (যেগুলোতে বিদ্যুত চলে যাওয়ার পরও তথ্য মুছে যায় না) যেগুলো রক্ষনাত্মক দৃষ্টিতে র‍্যাম সেগুলো হল রম, একধরনের ফ্লাশ মেমোরি যাকে নর-ফ্লাশ বলে। প্রথম র‍্যাম মডিউল বাজারে আসে যেটা তৈরী হয়েছিল ১৯৫১ সালে এবং ১৯৬০ দশকে এবং ১৯৭০ দশকের প্রথমদিকে বিক্রি হয়েছিল। যাইহোক, অন্যান্য স্মৃতি যন্ত্রাংশ (চৌম্বকীয় টেপ, ডিস্ক) তাদের জমাকৃত স্মৃতিতে নিশ্চিতভাবে প্রবেশ এবং ব্যবহার করতে পারে সবসময়ের জন্য।



মনিটরঃ (monitor)



 কম্পিউটারের আউটপুট অংশে থাকে মনিটর। মনিটর হচ্ছে কম্পিউটারে কাজ করার সময় ফলাফল প্রদর্শনের একটা যন্ত্র। এটা অনেকটা টেলিভিশনের মতো কাজ করে।প্রতিটি মনিটরের একটি অন-অফ সুইচ থাকে, যা দিয়ে এটাকে অন বা অফ করা যায়। এছাড়া ছোট ছোট কিছু বোতাম থাকে, যা দিয়ে মনিটরের আলো কম-বেশী করা যায়; ফটে ওঠা দৃশ্যকে ডানে বা বামে, উপরে বা নীচে সরানো যায়।



কীবোর্ডঃ





 কীবোর্ড হচ্ছে কম্পিউটারের ইনপুট অংশ। এই কীবোর্ডের সাহায্যে কম্পিউটারে তথ্য বা নির্দেশ প্রবেশ করানো যায়।বিভিন্ন ধরণের কীবোর্ড এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এখানে একটি ষ্ট্যান্ডার্ড কীবোর্ড এর মধ্যে যে যে কী বা বোতাম রয়েছে তা সব কীবোর্ডেই আছে। এই কীবোর্ডের আবার বেশ কয়েকটি অংশ বা ভাগ রয়েছে এবং এই বিভিন্ন অংশের ভিন্ন ভিন্ন নামও রয়েছে।



মাউসঃ( Mouse )



মাউসের সাথে আমরা আগেই পরিচিত হয়েছি। এটি অনেকটা ইদুরের মতো দেখতে তাই এর নাম মাউস। এক সরু প্রান্ত থেকে একটি তার সরাসরি সিপিইউ-এ সংযুক্ত থাকে। মাউসের উপরিভাগে দুটো চাপ দেওয়ার জায়গা আছে(অবশ্য অনেক মাউসে তিনটিও থাকে), এর ডান পাশের বোতামকে বলা হয় রাইট বাটন আর বাম পাশের বোতামকে বলা হয় লেফট বাটন। কম্পিউটার ওপেন করা থাকলে মাউস নাড়া দিলে একটি তীর চিহ্ন নড়া চড়া করে এটাকে বলা হয় মাউস পয়েন্টার। আর এই নাড়া চাড়া করাকে বলা হয় মাউস ড্রাগ করা। সাধারণত কোন ফাইল বা ফোল্ডারের আইকন সিলেক্ট বা নির্বাচন করতে হলে মাউসের পয়েন্টার তার উপর নিয়ে মাউসের বাম পাশের বোতাম একবার চাপ দিলে তাকে বলে সিঙ্গল ক্লিক। আর ওটাকে ওপেন করতে মাউসের বাম পাশের বোতাম ঘন ঘন দুবার চাপ দিতে হয় এই ঘনঘন দুবার চাপ দেওয়াকে বলে মাউসের ডবল ক্লিক। মাউসের ডান পাশের বোতাম চাপলে তাকে বলে রাইট ক্লিক। এই রাইট ক্লিক করে সাধারণত কোন ফাইল ফোল্ডার সিলেক্ট বা খোলা যায় না তবে এটা ব্যবহার করে তাৎক্ষণিক কিছু মেনু কমান্ড তালিকা পাওয়া যায়।